Bangla NewsNews

আইএসপি ব্যবসায় বহুগুণ লাভের হাতছানি

সাইফুল ইসলাম সিদ্দিক : ইন্টারনেট। একটি নেটেই আজ সমৃদ্ধ হচ্ছে পৃথিবী। যন্ত্র আর মানুষের মধ্যে গড়ে তুলেছে সেতুবন্ধন। এই সংযোগের কল্যাণেই প্রযুক্তি এখন হাতের নাগালে। একটি তারে গাঁটছাড়া হয়েছে গোটা জীবন। উৎপাদন-বিনোদন সবকিছুই। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটের জাদু। আলাউদ্দিনের চেরাগের মতো মুহূর্তেই নানা সেবা নিয়ে হাজির হচ্ছে।

ফলে আইএসপি বা ইন্টারনেট সরবরাহ ব্যবসা আর কেবল সংযোগ ফেরি করাতেই সীমাবদ্ধ নেই। বহুমাত্রিক হয়ে উঠছে ইন্টারনেটের ব্যবহার। ইন্টারনেট হয়ে উঠছে নতুন ব্যবসার ক্ষেত্র। সম্ভাবনার নতুন দরজা খুলে দিয়েছে আমাদের সামনে।

ইন্টারনেট ব্যবসায়ে আগামীর জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হিসেবে ইতিমধ্যেই খুলে গিয়েছে চারটি জানালা। এগুলো হচ্ছে ইন্টারনেট সেবা, ভিডিও অন ডিমান্ড ও আইপিটিভি, আইপি টেলিফোনি  এবং হোম অটোমেশন সল্যুশন। অল্পসময়ে বাতাসের গতিতে গ্রাহকের মন জয় করায় এই সেবা চারটি (কোয়াড্রপল প্লে) উঁকি দিচ্ছে অপার সম্ভাবনা হিসেবে। অর্থাৎ একটু স্মার্ট হয়ে ব্যবসা করতে পারলেই ৪ গুণ মুনাফা করতে পারবেন আইএসপি ব্যবসায়ীরা। শুধু দরকার সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় গত ডিসেম্বরে ইন্টারনেটের এই বহুমুখী সুবিধা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন।

সরকারের সঠিক নীতি নির্ধারণের কল্যাণে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নের অনেকটাই কাছাকাছি চলে এসেছি আমরা। শহর থেকে গ্রামেও এখন পৌঁছে যেতে শুরু করেছে উচ্চগতির সীমাহীন ব্যান্ডউউথ সুবিধা। নির্ধারিত খরচের মধ্যে বহুমুখী সুবিধা ভোগ করতে পারায় গ্রাহকদের কাছে আস্থার জায়গা হয়ে উঠেছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। নানান অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে কথা বলা, লাইভ টিভি দেখা, মুভি দেখা ছাড়াও ঘরে-বাইরে আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ, খাবার, পোশাক ও ওষুধের মতো মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে ইন্টারনেটের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।

এখন আর কেউ সিনেমা দেখতে সিনেপ্লেক্সে যাওয়ার তাগিদ বোধ করেন না। বিনোদন পিয়াসীরা ঝুঁকছেন ভিডিও অন ডিমান্ড সেবার প্রতি। স্বচ্ছ্ব ও নির্ভেজাল টিভি অনুষ্ঠান সরাসরি উপভোগ করতেও আইপিটিভির খোঁজ করছেন। ইন্টারনেট সংযোগে স্মার্টহোম হয়ে উঠছে বসতবাড়ি। হোম অটোমেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে একটি বাড়ির নিরাপত্তা, লাইটিং, এয়ার কন্ডিশনিং, বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা, হোম এন্টারটেইনমেন্ট ইত্যাদি প্রতিটি সিস্টেম আলাদা আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং একই সঙ্গে এগুলোর সমন্বয় করতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট হয়ে উঠেছে আরাধ্য। বিশ্ব এখন পুর্ণোদ্যমে প্রস্তুতি নিচ্ছে আইওটি ডিভাইসকে বরণ করে নিতে। সেখানে তৃতীয় বিশ্বের দেশ হলেও এগিয়ে রয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। অচিরেই স্মার্ট ইলেকট্রিসিটি/গ্যাস/ওয়াটার মিটারিং, সিটি পার্কিং, সিটি লাইটিং, যানবাহনে ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে যুক্ত করে অটোমেশনে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ। গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে বাসাবাড়িতে ৫০টি পর্যন্ত আইওটি ডিভাইস থাকবে। দুই হাজার ৪০০ কোটির বেশি ডিভাইসে ইনস্টল করা থাকবে আইওটি প্রযুক্তি। বাংলাদেশেও এই খাতের অপার সম্ভবনা কাজে লাগাতে ২০১৬ সালের নভেম্বরে দেশে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট অব থিংকস বা আইওটি ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেছে ডাটাসফট সিস্টেম।

বোঝাই যাচ্ছে কত বড় সম্ভাবনা এখন নিঃশ্বাস ফেলছে আমাদের ঘাড়ের কাছে। ইন্টারনেট সেবাকে কেন্দ্র করেই উন্মোচিত হতে যাচ্ছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। তাই আইএসপি দ্বারা কোয়াড্রপল প্লে সেবা আজ আর স্বপ্ন নয়, একটি ব্যবসাবান্ধব ও নির্ভরযোগ্য আয়ের উৎস।

লেখক : ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আইসিসি কমিউনিকেশন 

 রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ জুন ২০১৯/ফিরোজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *